কল্পনা
শাহীনুর ইসলাম
আমার কেবলই মনে হয় দিনের আলো জীবন-যাপনের জন্য যতটা অনুকূল, কল্পনা বিস্তারের জন্য ততটাই প্রতিকূল। কল্পনার ক্ষেত্রে রাতকে আমার কাছে সহায়ক মনে হয়। অবশ্য রাতের নিরেট অন্ধকারের এক কোণে ছোট্ট করে একটা বাতি জ্বলতে হবে। সে আলো ছোট্ট একটা জায়গা ঘিরে কেন্দ্রীভূত থাকে বিধায় কল্পনাও এমন পরিবেশে নিজেকে অবাধে প্রকাশ করতে পারে। দিনের আলোটা সেক্ষেত্রে মনকে বড় বেশি এদিক-সেদিক নিয়ে যায়। কারণ দিনের তো নিজেরই অনেক কিছুই দেখানোর থাকে এবং দাবি থাকে। তাই কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখাই ভাব তার সহজাত। ফলে সহজেই মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তখন কল্পনা বদ্ধ ঘরে অভিমান করে শুয়ে থাকে। আর রাত দিনের বিচ্ছিন্ন দৃশ্য, গন্ধ, চিন্তাকে অবাধ কল্পনায় প্রকাশ করতে চায়। রাতের কল্পনা তাই কখনো উড়া-ধুড়া, কখনো আবার সুশৃঙ্খল। তবে উভয় ক্ষেত্রে তা মধুর বটে। কারণ কল্পনাই আমাদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অন্যতম দুটি উপাদান— স্বপ্ন ও আশাকে— পথ দেখায়, সহযাত্রী হয় এবং গন্তব্যে পৌঁছাত সহায়তা করে। কল্পনাই সৃজনশীলতার প্রধান চাবিকাঠি।
অবশ্য দিনে যে মানুষ কল্পনা করে না তা তো নয়। যে কল্পনাবিলাসী তার ক্ষেত্রে দিনই কি আর রাতই কি। তবে সেক্ষেত্রে তারা রাতের মতো পরিবেশ খুঁজে নেয়— অন্তত আলোর তীব্রতা যেখানে কম, যেখানে আলো পরিব্যপ্ত থাকে কিন্তু বিকিরিত হয় না। আবার দেহখানি যেখানে ভেসে ভেসে চলে সেখানেও কল্পনা আপনি এসে ধরা দেয়, যেমন— বাসের ভেতর চলার সময। তবুও তুলনামূলক বিচারে রাত বা রাতের মতো আলো-আঁধারি পরিবেশকেই আমার কাছে কল্পনার সহায়ক মনে হয়। আর ঘুমানোর আগে দেহখানি বিছানায় এলিয়ে দিলে তো কথাই নেই।
কল্পনা তার শাখা প্রশাখা বিস্তার করে যেখানে বাস্তবতা পুরোপুরি থাকে না, লেশমাত্র থাকে। ঘরের মধ্যে থেকে জানালা দিয়ে বাহির দেখা তাই এত সুন্দর লাগে। কারণ একটাই বাইরের পুরো বাস্তবতা আমরা দেখতে পাই না, বাস্তবতার খানিকটা অংশ দেখতে পাই। আর তার উপর ভর করে বাকিটা আমরা নিজেদের মতো কল্পনা করে নেই।
Be the first to comment