বাইকু বা কবিতার ছোটগল্প
শাহীনুর ইসলাম
ভূমিকা
ক্ষুদ্র যা কিছু তাও ফেলনা নয়। এমনকি ক্ষুদ্রতম হলেও। কারণ ক্ষুদ্র দিয়েই বৃহৎকে চেনা যায়, আবিস্কার করা যায় এবং পরম করে পাওয়া যায়। বৃহৎ যা কিছু আছে জগতে, তা সহজেই আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু যা কিছু অণু, ক্ষুদ্র, কিঞ্চিৎ, ঈষৎ, সামান্য বা অবহেলিতভাবে তুচ্ছ, তা সহজে কারো চোখে পড়ে না। একে দেখতে হলে, অনুভবে জাগাতে হলে কাউকে না কাউকে দেখানোর প্রয়োজন পড়ে। এই দেখানোর কিঞ্চিৎ প্রয়াস আসে তুচ্ছ রচনাগুলিতে।
আমাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যেহেতু বিশেষকে অবলম্বন করে নির্বিশেষে পৌঁছায়, আর সেখানে ক্ষুদ্রই মূলত রসদ যোগায়, সেহেতু ক্ষুদ্র কোনোভাবেই উপেক্ষাযোগ্য নয়। এ যেন বিন্দু বিন্দু জলে সিন্ধু রচনারই উপায়। অথবা বিন্দুর মধ্যেই সিন্ধুকে ধরার উপায়।
সময়ের ক্ষুদ্রতা যা সেকেন্ডের ভগ্নাংশ, বাক্যের ক্ষুদ্রতা যা শব্দ, শব্দের ক্ষুদ্রতা যা অক্ষর, বর্ণের ক্ষুদ্রতা যা বর্ণমাত্রা, জীবনের ক্ষুদ্রতা যা মুহূর্ত, লিখিত শিল্পেরও সে রকম কিছু থাকা উচিত। দৃশ্য শিল্পে যেমন আলোকচিত্রণ এ কাজটি পুরোপুরি করে। লিখিত শিল্পে তা করে জাপানি হাইকু ও অনুকবিতা। তবে অনুকবিতার নির্দিষ্ট লাইন সম্ভবত নেই, আর হাইকু তিন লাইনে ৫-৭-৫ অক্ষরকে(Syllable) ধারণ করে। কিন্তু সেই আদল বা বিন্যাস নিচের ক্ষুদ্র রচনাগুলোতে নেই। তবু এই হাইকুর অনুকরণে এই ক্ষুদ্রতার নাম দেওয়া যেতে পারে ‘বাইকু’, যেহেতু তা বাংলায় রচিত। কিংবা নাম দেওয়া যেতে পারে ‘কবিতার ছোটগল্প’। কারণ তিন লাইনের প্রতিটা বাইকুতে আছে ছোট্ট করে বলা একটি গল্প, একটি অনুভব, একটি চিন্তন কিংবা একটি দৃশ্য। আছে কবিতার ব্যঞ্জনাও। তবে ঠিক কবিতা নয়। আবার ছোটগল্প নামে সাহিত্যের একটি শাখাও আছে। তাই আমি দুটোকে এক করে নাম দিয়েছি—বাইকু বা কবিতার ছোটগল্প।
পর্ব-১
১
মোচড়ানো জীবন
দুমড়ানো হৃদয়
নিদারুণ দৃশ্য।
২
কিছু ময়লা
একটি কাক
জায়গা সাফ।
৩
নষ্ট ভ্রুণ
কষ্ট জমা
নেই ক্ষমা।
৪
একটি গাছ
পাতায় কীট
মলিন মুখ।
৫
ঘাসের স্তুপ
রাখাল ছেলে
খুশী অনেক।
৬
জোছনা রাত
তোমার হাত
আমার হাতে।
৭
নেশার জীবন
ঘোর যে কাটলো
অসীম আঁধার।
৮
দুইটি পেয়ালা
ঝুলন্ত থাকে
ঈশারায় ডাকে ।
৯
একটি শব্দ
ও একটি সুর
মাথায় যে ঘোরে।
১০
কম্পিউটারে
সবকিছু আছে
শুধু তুমি নেই।
(চলবে)
Be the first to comment