সুখ, শান্তি ও আনন্দ
-শাহীনুর ইসলাম
সুখের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছুটা আক্রোশ আছে। তার কারণ এই নয় যে আমি ভাল থাকতে চাই না। কিন্তু সুখে থাকা মানে আমার কাছে ভাল থাকা নয়। সুখে থাকাটা ব্যক্তিক, আত্মকেন্দ্রিক, পরশ্রীকাতরতাপূর্ণ ও স্বার্থপরতানির্ভর। সুখে আমরা তখনই থাকি যখন দেখি আরেকজন আমাদের চেয়ে বিষয়-বৈভবে, পদে-উপাধিতে, রূপে-গুণে কিংবা চেহারা-সুরুতে খারাপ। তুলনামূলক এই ভাল থাকার আরেক নাম ‘সুখ’। রাস্তায় কোনো একজনের ‘পা নেই অবস্থা’ দেখে নিজের ‘জুতা কেনার টাকা নেই’ দুঃখ ভুলে যাওয়ার নাম ‘সুখ’। এ সুখ তো আমি চাই না। আমি চাই সেই পা-হীন মানুষটিও তার অবস্থা সত্ত্বেও ভাল থাক, আর আমি তার সাথে নিজের জুতা কেনার দুঃখ তুলনা না করে কিভাবে তা কিনতে পারি এবং যদি পারি কিভাবে সেই মানুষটিকে সহযোগিতা করতে পারি সে জন্য কাজ করি।
সেক্ষেত্রে আনন্দে থাকা কিংবা শান্তিতে থাকাটা আমি পছন্দ করি। একা একা সাধারণত আনন্দে থাকা যায় না। এতে অন্তত আরেকজনের অংশগ্রহণ লাগে, এবং এ কারণে তা সামষ্টিকতা বোধে জড়িত। আর শান্তিতে থাকাটা নিরীহ ও নির্ভেজাল। এতে ব্যক্তিকতা বোধ থাকলেও তা অগোচর ও পরিব্যপ্ত সামষ্টিকতা বোধে আচ্ছন্ন। এখানে কোনো স্বার্থপরতা নেই, কোনো পরশ্রীকাতরতাও নেই; আছে নিজেকে এবং অন্যকে ভাল থাকতে দেয়ার সহজাত স্বীকৃতি।
সুখে ও শান্তিতে স্থিরতা থাকে, আর আনন্দে থাকে গতি। যারা সুখে থাকে তাদের স্বার্থপরতা এবং আত্মকেন্দ্রিকতাও তাই চির-স্থির থাকে। সেখান থেকে জন্ম নেয় দাম্ভিকতা, অহংবোধ ও উন্নাসিকতা। আর যারা শান্তিতে থাকে তাদের থাকে চির-স্থির সহনশীলতা, অন্যকে বোঝার ক্ষমতা এবং অন্যকে অযথা খোঁচাখুঁচি না করার বোধ। অন্যদিকে যারা আনন্দে থাকে তাদের থাকে চির-গতিশীল, চির-চলিষ্ণু অনুভূতি যা সবসময়ই সামষ্টিকতাকেই স্বাগত জানায়। তবে আনন্দটা সাধারণত ক্ষণকালের ব্যাপার, কিন্তু শান্তিটা দীর্ঘকালের ব্যাপার। কাজেই সুখের চেয়ে শান্তি ভাল, আর শান্তির মাঝে মাঝে আনন্দ আরো ভাল।
Be the first to comment