কথাসাহিত্যের শিল্পরূপ: ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি

অনুবাদ




কথাসাহিত্যের শিল্পরূপ

মূল: ড্যাভিড লজ

অনুবাদ: শাহীনুর ইসলাম


ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি


“এই প্রধান পালটিকে টেনে অবশ্যই আমাদের কাছে আনতে হবে,” আমি বললাম। ছায়াগুলো টু শব্দটি না করে হেলে দুলে আমার কাছ থেকে চলে গেলো। ঐ মানুষগুলো নিজেদেরই প্রেতাত্মা ছিলো, আর রশিতে তাদের ভার এক দল প্রেতাত্মার ভারের চেয়ে বেশি ছিলো না। আসলে কখনো একটা পাল যদি শুধু আধ্যাত্মিক শক্তি বলে টেনে আনা যেতো, তবে তা অবশ্যই হতো এই পালটি; কারণ যথাযথভাবে বলতে গেলে, গোটা জাহাজে কাজটির জন্য যথেষ্ট পেশীশক্তি ছিলো না, জাহাজের উপরে হতভাগা আমাদের কথা তো দূরেই থাক। অবশ্য কাজটির জন্য আমি নিজেই নেতৃত্ব দিলাম। আমার পিছন পিছন এক রশি থেকে আরেক রশিতে তারা নিস্তেজভাবে চললো, হোঁচট খেলো এবং হাঁপালো। টাইট্যানদের মতো তারা খাটলো। নিদেনপক্ষে এক ঘন্টা আমরা এতে নিয়োজিত ছিলাম, আর সব সময় কালো ব্রহ্মাণ্ড কোনো আওয়াজ তোলে নি। শেষ লীচ-লাইনটা দ্রুত করা হলে অন্ধকারে অভ্যস্ত আমার চোখ রেইলের উপর পড়ন্ত, শ্রান্ত মানুষগুলোর আকার বুঝতে পারলো, যারা মেঝের ফাঁকে পড়ে গেলো। একজন আফটার-ক্যাপস্ট্যানটিতে ঝুলে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য ফুঁপিয়ে উঠলো; আর তাদের মাঝে আমি শুধু আমার আত্মার অসুস্থতা বোধ ও রোগ-বালাইয়ে অনাক্রম্য শক্তির টাওয়ারের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার পাপ ভারের বিরুদ্ধে, আমার অযোগ্যতা বোধের বিরুদ্ধে লড়াই করে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম, আর তারপর বললাম:

“ভাইসব, এখন আমরা জাহাজের পিছনে যাবো এবং পালটিকে বর্গাকার করবো। জাহাজটির জন্য এটুকুই আমরা করতে পারি; আর বাকিটা নির্ভর করছে জাহাজের উপর।”

জোসেফ কনরাড দ্য শ্যাডোলাইন (১৯১৭)

নানা উপায়ে একটা টেক্সটের সাথে আরেকটি টেক্সটের উল্লেখ করা যায়: প্যারডি, প্যাস্টিশ, প্রতিধ্বনি, পরোক্ষ উল্লেখ, প্রত্যক্ষ উদ্ধৃতি, কাঠামোগত সমরূপতাবাদ (structural parallelism)। কোনো কোনো তাত্ত্বিক বিশ্বাস করেন যে ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি সাহিত্যেরই দিক, বিশ্বাস করেন সব টেক্সট অন্যান্য টেক্সটের কোষ থেকে বয়ন করা, আর সেটা সেগুলোর লেখকেরা জানুক আর না-ই জানুক। প্রামান্য-রীতির বাস্তবতার প্রতি দায়বদ্ধ লেখকদের প্রবণতা থাকে এ নীতিকে অস্বীকার করা বা চেপে রাখা। উদাহরণস্বরূপ, স্যামুয়েল রিচার্ডসন ভেবেছিলেন যে তিনি সম্পূর্ণ নতুন এক ধরনের কথাসাহিত্য  উদ্ভাবন করেছেন, যা আগেকার সাহিত্য থেকে পুরো স্বাধীন, কিন্তু এটা পামেলা (১৭৪০)য় দেখা সহজ; এক কুমারী কাজের মেয়ে যে তার মনিবকে অনেক চেষ্টা-চরিত্র করে বিয়ে করে, তাকে নিয়ে তাঁর এ গল্পটি রূপকথা গল্পের আদিরূপ। পরবর্তী  গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি উপন্যাস হচ্ছে হেনরি ফিল্ডিংয়ের জোসেফ অ্যান্ড্রুজ (১৭৪২), যা পামেলা  র প্যারডি হিসেবে শুরু হয়, আর মক-হিরোয়িক রীতিতে লিখিত অনেক প্যাসেজ ও উত্তম সামারিটানের প্যারাবলের পুনর্কর্মকে অন্তর্ভূক্ত করে। সংক্ষেপে বলতে গেলে ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি জড়িয়ে আছে ইংরেজি উপন্যাসের মূলে, অন্যদিকে প্রাচীন পুরাণ ও আগেকার সাহিত্য কর্মকে আকার প্রদান করতে, কিংবা সমসাময়িক জীবনের চিত্রায়নে অনুরণন প্রদান করতে মুক্তভাবে প্রক্রিয়াজাত করে কালানুক্রমিক বর্ণালীর অন্য প্রান্তে একে প্রতিরোধ করার চেয়ে বরং কাজে লাগানোর প্রবণতা রয়েছে ঔপন্যাসিকদের।

কোনো কোনো লেখক অন্যদের চেয়ে বেশি সুস্পষ্টভাবে এমন উল্লেখ করেন। জেমস জয়েস তাঁর আধুনিক ডাবলিন জীবনের মহাকাব্যের নাম ইউলিসিস  প্রদান করেন, নবোকভ ললিতার পূর্বসূরীকে পোয়ের অ্যানাবেল নাম প্রদান করে পাঠকদের আগাম ধারণা দেন। কনরাড দ্য শ্যাডোলাইন: এ  “আ কনফেশন” উপনামে সূক্ষ্মতর ইঙ্গিত দিয়ে থাকতে পারেন।

উৎসগত দিক দিয়ে আত্মজীবনীমূলক এই উপন্যাসিকাটি এক তরুণ বণিক নৌ অফিসারের বর্ণনা যাকে বাড়ি যাওয়ার রাস্তার জন্য ফার ইস্টার্ন বন্দরে অপেক্ষা করার সময় অপ্রত্যাশিতভাবে প্রথম আদেশ দেয়া হয় এক চলমান জাহাজের দায়িত্ব নেয়ার জন্য, যে জাহাজের ক্যাপ্টেন সাগরেই মারা গেছে। সিয়াম উপসাগরে যাত্রা করে শীঘ্রই সে আবিষ্কার করে যে মৃত ক্যাপ্টেনটি মানসিক বিকারগ্রস্ত ছিলো, আর তার নিজের প্রথম সহযাত্রী বিশ্বাস করে যে  বুড়ো লোকটি জাহাজটিকে অভিশাপ প্রদান করেছে। এ আশঙ্কা অবধারিত মনে হয় যখন জাহাজটি শান্ত হয়ে যায়, নাবিকেরা জ্বরে অসুস্থ হয়ে পড়ে, আর তরুণ ক্যাপ্টেনটি আবিষ্কার করে যে তার পূর্বসূরী কুইনাইনের সব মজুদ ধ্বংস করে ফেলেছে। তখন পিচ-কালো মধ্য রাতে আবহাওয়ায় পরিবর্তনের চিহ্ন থাকে।

অসুস্থ ও দুর্বল নাবিকেরা তাদের ক্যাপ্টেনের আদেশ মান্য করে প্রধান পালটি টেনে আনে যাতে করে বাতাস এলেই যেন জাহাজটি চলতে পারে; এই বর্ণনা দেখানো হয় শাস্ত্রীয় ভাষার অনুপঙ্খে (“লীচ-লাইন”, “আফটার-ক্যাপস্ট্যান”, “মূল পালটিকে বর্গাকার করা”)। কনরার্ড জানতেন তিনি কী নিয়ে কথা বলছেন — অবশ্য তিনি বিশ বছর ধরে একজন দক্ষ নাবিক হিসেবে সমুদ্রে ছিলেন। কিন্তু এটা মনে করিয়ে দেয় ইংরেজি সাহিত্যের সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতাগুলোর একটির প্যাসেজকে, স্যামুয়েল টেইলর কোলেরিজের “দ্য রাইম অব দ্য এইনশিয়ান্ট ম্যারিনার” কে যেখানে মৃত নাবিকেরা মোহমুগ্ধ জাহাজের পাটাতন থেকে জেগে ওঠে এবং রশিগুলো দিয়ে জাহাজ পরিচালিত করে:

নাবিকেরা সবাই রশিগুলো দিয়ে কাজ করলো,

যেখানে তারা তা করতে অভ্যস্ত ছিলো না;

জড় হাতিয়ারের মতো তারা তাদের অঙ্গগুলো তুললো —

আমরা ছিলাম ভয়ঙ্কর নাবিক।

 বৃদ্ধ নাবিক এক অ্যালবেট্রসকে হত্যা করে, শান্ত ও সংক্রামক রূপে তার জাহাজে অভিশাপ আনে; এর থেকে সে মুক্তি লাভ করে যখন অসচেতনভাবে সে পানি-সাপগুলোকে আশীর্বাদ করে, আর অতিপ্রাকৃত এজেন্সিরা তাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়; এ অগ্নিপরীক্ষায় সে-ই শুধু বেঁচে যায়, কিন্তু তার জাহাজের সঙ্গীদের ভাগ্যের জন্য সে দোষ ও দায় বোধ করে। কনরাডের গল্পে যে কুকাজ জাহাজটিকে অভিশপ্ত করে, তা মৃত ক্যাপ্টেনের কাছে স্থানান্তরিত হয়, কিন্তু কথকের জন্য জেরটা আপাত-ধর্মীয় অভিজ্ঞতা যা  বৃদ্ধ নাবিকের থেকে ভিন্ন নয়। যা শুধু ছেঁড়া রশি হতে পারতো তা “শ্যাডো-লাইন” বরাবর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ের কাজ হয়ে দাঁড়ায়, যা নিস্পাপতাকে অভিজ্ঞতা থেকে, যৌবনকে পরিণত বয়স থেকে, ঔদ্ধত্যকে নম্রতা থেকে বিভক্ত করে। রহস্যময়ভাবে জ্বর(বৃদ্ধ নাবিকের মতো) থেকে রক্ষা পেয়ে তরুণ ক্যাপ্টেন “আমার আত্মার অসুস্থতা বোধ …  আমার পাপ ভার…  আমার অযোগ্যতা বোধ…” অনুভব করে। “একটি জাহাজ শান্ত ও হালকা ভাবে দুলে দুলে ভাসছে, সব নাবিকেরা এর পাটাতনের চারপাশে ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে — এমন দৃশ্যকল্প তাকে তাড়া করে ফেরে।” প্রধান পালটি তোলার পর এবং বাতাস আবির্ভূত হলে, সে ভাবে, “অপচ্ছায়া ঘুমিয়েছে, কুপ্রভাব উঠে গেছে, অভিশাপ মোচিত হয়েছে। আমরা এখন দয়ালু ও উদ্যমী এক বিধিলিপির হাতে। এটা আমাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে…”

তুলনা করুন:

দ্রুত, দ্রুত উড়ে গেলো জাহাজটি,

তবুও তা আলতোভাবেও যাত্রা করলো:

মিষ্টিভাবে, মিষ্টিভাবে বয়ে গেলো হাওয়া —

শুধু আমার উপর বয়ে গেলো।

কনরাডের গল্পের জাহাজটি যখন ডাক্তারী সাহায্যের অনুরোধ জানিয়ে সিগন্যাল পাঠিয়ে দিয়ে শেষে বন্দরে পৌঁছে, তখন নৌ সার্জনরা যারা সে জাহাজটিতে চড়ে ছিলো, তারা পাটাতনগুলো পরিত্যক্ত দেখে কোলেরিজের কবিতার জাহাজের একমাত্র দায়িত্বে থাকা বৃদ্ধ নাবিকের ফিরে আসায় পাইলট ও তপস্বীর মতো অবাক হয়। বৃদ্ধ নাবিকের মতো ক্যাপ্টেনটি তার নাবিকদের ভোগান্তির দায় বোধ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারে না। জাহাজ থেকে একজন একজন করে সরিয়ে নিলে সে বলে, “আমার চোখের সামনে একজন একজন করে তারা চলে গেলো — তাদের প্রত্যেকেই তিক্ততম ধরনের ভর্ৎসনার সশরীরী রূপ…” তুলনা করুন:

যন্ত্রনা, অভিশাপ, যার দরুন তারা মারা গেলো,

তা কখনো মারা গেলো না:

তাদের চোখ থেকে আমার চোখ সরাতে পারি নি,

প্রার্থনার জন্যও সরাতে পারি নি।

বৃদ্ধ নাবিক যে নিজেকে ভারমুক্ত করতে “তিনজনের একজনকে থামায়” তার মতো, ক্যাপ্টেনটি তার অভিজ্ঞতার স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হয়।

 কনরাড সচেতনভাবে এসব পরোক্ষ উল্লেখ (allusion) করেছেন কিনা তা টেক্সট থেকে প্রমাণ করা যায় না, আর যদিও চেষ্টা করে বের করাটা মজার ব্যাপার হবে, তবুও উত্তরে তেমন তফাৎ হবে না। প্রতিধ্বনিগুলোই এর প্রমাণ যে তিনি কোলেরিজের কবিতা জানতেন, কিন্তু সেগুলো হয়তো তিনি অসচেতনভাবে পুনরুৎপাদন করেছেন (যদিও ব্যক্তিগতভাবে এতে আমার সন্দেহ আছে), ঠিক যেমন পাঠকের উপর সেগুলোর মগ্নচৈতন্যজাত প্রভাব থাকতে পারে, যে পাঠক সেগুলো পড়ে আবার ভুলে গেছে, কিংবা যে পাঠক নির্বাচিত কিছু উদ্ধৃতির দ্বারাই শুধু তা  জানে। এটাই নিশ্চয়ই প্রথম কিংবা একমাত্র উপলক্ষ নয় যেখানে কনরাড এভাবে সাহিত্যের পরোক্ষ উল্লেখ অলঙ্কার ব্যবহার করেছেন। হার্ট অব ডার্কনেস এ কঙ্গোর অভ্যন্তরে মার্লোর যাত্রা সুস্পষ্টভাবে তুলনা করা হয় দান্তের ইনফার্নো র নরক চক্রে অবতরণের সাথে, আর তাঁর শেষের দিককার উপন্যাস, ভিক্টরি  শেক্সপিয়ারের দ্য টেমপেস্ট এর ছাঁচে লেখা।

জেমস জয়েসের ইউলিসিস  সম্ভবত আধুনিক সাহিত্যে ইন্টারটেক্সচুয়ালিটির সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও প্রভাবশালী দৃষ্টান্ত। ১৯২২ সালে যখন এটি প্রকাশিত হয়, তখন টি. এস. এলিয়ট জয়েসের ওডিসি র ব্যবহারকে অভিনন্দিত করেছিলেন কাঠামোগত কৌশল হিসেবে, “সমসাময়িক ও প্রাচীন কালের মধ্যে অবিরাম সমতুল্যতার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন”, অভিনন্দিত করেছিলেন উত্তেজনাকর কৌশলগত সাফল্য হিসেবে, “আধুনিক বিশ্বকে শিল্প সম্ভব করে তোলার এক পদক্ষেপ।” এলিয়টের মহান কবিতা “দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড”, যা ১৯২২ সালেই প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি সমসাময়িক ও গ্রেইল কিংবদন্তীর মধ্যে অবিরাম সমতুল্যতা প্রয়োগ করেন, এর উপর কাজ করার সময় পূর্ববর্তী বছরগুলোতে তিনি যেহেতু জয়েসের উপন্যাস ধারাবাহিকভাবে পড়ছিলেন, সেহেতু ইউলিসিস  সম্পর্কে তাঁর প্রশংসাকে আমরা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতে পারি অংশত স্বীকৃতি হিসেবে এবং অংশত ইশতেহার হিসেবে। কিন্তু দুটো কাজের কোনোটার মধ্যেই ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি একটি উৎসে কিংবা কাঠামোগত সমরূপতাবাদে(structural parallelism) সীমাবদ্ধ নয়। “দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড” অনেক ভিন্ন উৎসের প্রতিধ্বনি; ইউলিসিস প্যারডি, প্যাসটিশ, সব ধরনের টেক্সট থেকে উদ্ধৃতি ও উল্লেখে ভরা। উদাহরণস্বরূপ, পত্রিকা অফিসের একটি অধ্যায় পর্বে পর্বে বিভক্ত করে শিরোনাম দেয়া হয়েছে যা সাংবাদিক রীতির বিকাশকে অনুকরণ করে, একটা অধ্যায় আছে সস্তা নারী ম্যাগাজিনগুলোর প্যাসটিশে বড় আকারে লেখা এবং আরেকটি অধ্যায় প্রসূতি হাসপাতালের যা অ্যাঙলো স্যাক্সন যুগ থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ইংরেজি গদ্যের ঐতিহাসিক বিকাশকে প্যারডি করে।

 আমি যেহেতু প্রায় ত্রিশ বছর ধরে অ্যাকাডেমিক পেশার সাথে কথাসাহিত্য  লেখাকে মিশিয়ে ফেলেছি, সেহেতু এটা অবাক করার মতো নয় যে আমার নিজের উপন্যাসগুলো ক্রমবর্ধমানহারে ইন্টারটেক্সচুয়াল হয়েছে; আর যেমনটা ঘটে, জয়েস ও এলিয়ট দুজনই এ ব্যাপারে বেশ তাৎপর্য্যপূর্ণ প্রভাব রেখেছেন, বিশেষ করে জয়েস। দ্য ব্রিটিশ মিউজিয়াম ইজ ফলিং ডাউন  প্যারডিগুলো ইউলিসিস এর উদাহরণ দ্বারা একদিনের ঘটনার মতো অনুপ্রাণিত হয়েছে, আর শেষ অধ্যায়টি মলি ব্লুমের স্বগতোক্তির প্রতি বেশ খানিকটা অসম্মানজনক শ্রদ্ধাস্মল ওয়ার্ল্ড  এর জেনেসিসে “সাফল্য”এর বিষয়টি আসে যখন অ্যাকাডেমিক কেতাদুরস্ত ধনী লোক যারা সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পেশাগতভাবে ও যৌনগতভাবে ঘুরে বেড়ায়, তাদের উপর এবং কিং আর্থার ও গোল টেবিলের নাইটবৃন্দ এবং তাদের গ্রেইল সন্ধানের গল্প, বিশেষ করে যেমনটা জেসি এল. ওয়েসটন এক বইয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন, এবং টি. এস. এলিয়ট তাঁর “দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড” এর জন্য যাতে তল্লাশি চালিয়েছেন, তার উপর কমিক ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপাত্মক উপন্যাস লেখার সম্ভাবনা উপলব্ধি করি। এ উপন্যাসগুলোর (দ্য ব্রিটিশ মিউজিয়াম  ও রাইট অন  এর আফটারওয়ার্ডে) জেনেসিস নিয়ে আমি অন্যত্র লিখেছি এবং সেগুলোকে এখানে আমার মত প্রকাশের জন্য উল্লেখ করছি যে ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি টেক্সটে শুধু শোভাবর্ধক সংযোজন তো নয়ই, আবশ্যিকভাবেও নয়, কিন্তু কখনো কখনো এর ধারণা ও রচনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অবশ্য কথাসাহিত্যের শিল্পরূপে শুধু লেখকদের জানা আরেকটি দিক রয়েছে, যাতে প্রায়শই ইন্টারটেক্সচুয়ালিটি থাকে, আর সেটাই হারানো সুযোগ। পঠন কালে অপরিহার্যভাবে কেউ কখনো কখনো তার নিজের কাজ শেষ হওয়ার পর সে কাজের প্রতিধ্বনি, আগাম ধারণা ও সাদৃশমূলক তুলনার(analogy) সাক্ষাৎ পেয়ে যান। অবশ্য তখন এত দেরি হয়ে যায় যে আবিস্কারের সুযোগটা আর গ্রহণ করা যায় না। স্মল ওয়ার্ল্ড  এর শেষের দিকে সর্বদা ডিসেম্বর মাসের শেষ দিনগুলোতে অনুষ্ঠিত হওয়া এম. এল. এ. কনভেনশনের সময়ে নিউ ইয়র্কের একটি দৃশ্য আছে। সমালোচনার কাজের উপর এক অধিবেশনে নায়ক, পার্স ম্যাকগ্যারিগলের বিজয়ের পর আবহাওয়ায় অবাক করা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, উষ্ণ দখিন হাওয়ার স্রোত ম্যানহাটানের তাপমাত্রাকে বাড়িয়ে দেয় সে ঋতুর নজিরবিহীন পর্যায়ে। বইটির পৌরাণিক পরিকল্পনায় গ্রেইল নাইট প্রয়োজনীয় প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার দরুন এটি গ্রেইল কিংবদন্তীর মধ্যে ফিশার কিংয়ের বন্ধ্যা রাজ্যের উর্বরকরণের অনুরূপ। আর্থার কিংফিশার, আধুনিক অ্যাকাডেমিক সমালোচনার যিনি সবচেয়ে অভিজ্ঞ, বয়স্ক ও সম্মানিত ব্যক্তি(doyen), তিনি কনভেনশনটির সভাপতিত্ব করে অনুভব করেন যে যৌন অক্ষমতার অভিশাপ অলৌকিকভাবে তার কাছ থেকে উঠে গেছে। তার কোরিয়ান প্রেমিকা, সং-মিকে বলেন:

“সময়টা হ্যালসিয়ন দিনের মতো… শীতের মাঝে শান্ত আবহাওয়ার সময়। প্রাচীন মানুষেরা এ সময়কে বলতো হ্যালসিয়ন দিন, যখন কিংফিশারের কথা ছিলো তার ডিমে তা দেয়ার। মিলটনের কথা স্মরণ করুন — ‘মুগ্ধ তরঙ্গে পাখি বসে তা দিচ্ছে? পাখিটি ছিলো কিংফিশার। গ্রীক ভাষায় এর মানেই ‘হ্যালসিয়ন’, কিংফিশার, সং-মি। হ্যালসিয়নের দিন মানেই কিংফিশারের দিন। আমার দিন। আমাদের দিন।”

চমৎকারভাবে যথার্থ পদ্যাংশ উদ্ধৃত করে থাকতে পারতেন তিনি:

কিংফিশার আবহাওয়া, হালকা, মৃদু হাওয়ায়

পূর্ণ ক্যানভাসে,  আটটি পাল টানছে ভাল।

আর তিনি আরো যোগ করে দিতে পারতেন: “এ লাইনগুলো ‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড’ এর সর্বোৎকৃষ্ট লাইন, কিন্তু এজরা পাউন্ড সেগুলো বাদ দিতে টম এলিয়টকে প্ররোচিত করেন।” স্মল ওয়ার্ল্ড  প্রকাশিত হওয়ার পর কিছু সময় পর্যন্ত দূর্ভাগ্যজনকভাবে এ লাইনগুলো আমি পাই নি ভ্যালেরি এলিয়টের সংস্করণে, দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড: এজরা পাউন্ডের টীকাটিপ্পনীসহ আসল খসড়ার হুবহু কপি প্রতিলিপি


আগের পর্ব                                                                                                                     পরের পর্ব




Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*