ঘটনার অঘটনাভাস




মুক্তগদ্য


ঘটনার অঘটনাভাস

শাহীনুর ইসলাম


ঘটনার ভেতরে থেকে বেশি চিন্তা করতে নেই। করলে ঘটনার অঘটনাভাস দেখা দেওয়ার যথেষ্ট ফুরসত থাকে। বিশেষ করে ঘটনাটির যদি অঘটন কিংবা দূর্ঘটনের দিকে মোড় নেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কারণ এতে করে ঘটনার ভূতটি পেয়ে বসে এবং সুস্থ ও স্বাভাবিক চিন্তার গতিকে রুদ্ধ করে দুশ্চিন্তা এবং নৈরাশ্যের দিকে ধাবিত করে। ঘটনার নিজস্ব যে পরিধি থাকে তার মধ্যে আটকে ফেলে চিন্তা করায় যা মুক্ত দৃষ্টি কিংবা বস্তুনিষ্ঠ চিন্তাশক্তিকে রুদ্ধ করে তোলে। খেলার বিষয়ে ভাল-মন্দ বিচার করতে গেলে যেমন মাঠের ভেতর থেকে পুরোপুরি বিচার করা যায় না, বরং মাঠের বাইরে থেকে বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন করা যায়, তেমনই ঘটনার বাইরে এসে কিছুটা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ঘটনাকে মূল্যায়ন করতে হয়। আমাদের জীবনে যে এত নেতিবাচক অনুভূতি প্রাধান্য বিস্তার করে থাকে কোনো ঘটনার কারণে তার কারণ অনেকটাই ঘটনার ভেতরে অবস্থান করে সেই ঘটনাকে বিচার করা; ঘটনায় আচ্ছন্ন থেকে মুক্তি খোঁজা। এ কারণে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিদ্ধান্তে ভুল করে থাকি। তাই ঘটনা বা পরিস্থিতি সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে ঘটনা থেকে কিছুটা হলেও নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ভাবা দরকার। মুক্তির জন্য ঘটনার বাইরে এসে ঘটনায় আচ্ছন্ন হওয়া বা মনোযোগ নিবদ্ধ করা জরুরী। ঘরে বসে বাইরে থেকে ঘরের বদ্ধ দরজা যেমন খোলা যায় না এ ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। ঘটনার ভেতরে থেকে সিদ্ধান্ত নিলে অনেক পরে যখন সেই ঘটনা কখনো মনে পড়ে তখন এই ভেবে নিজে নিজে হাসি বা নিজেকে তিরস্কার করি— আমি এই রকম ছিলাম বা এ কাজ আমি করেছি! কারণ ততদিনে আপনি ঘটনার বাইরে থেকে ঘটনাটিকে দেখছেন।

তাই বলে ঘটনাকে এত দূর থেকে কিংবা এত বাইরে থেকে দেখতে নিশ্চয়ই বলছি না যাতে ঘটনাটি পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন বা পরোক্ষই থেকে যায়। ঘটনার বাইরে গিয়ে ঘটনাকে নিরাপদ দূরত্বে বিশ্লেষণ করলে সেই ঘটনার একটা সামগ্রিক চিত্র পাওয়া যায় যা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনেক সহায়তা করে। কিন্তু ঘটনার ভেতরে থেকে ঘটনাকে বিশ্লেষণ করলে সেখানে শুধু ঘটনার বিভিন্ন অংশই মেলে যা সিদ্ধান্তকে প্রায়শই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। ঘটনার ভেতরে থাকারও প্রয়োজন আছে কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে তা যেন বাইরে থাকার চেয়ে বেশি না হয়।




Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*